নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর / ২৫ / ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক: খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন (ক্রিস্টমাস ডে) আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শুভ বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে। গতকাল বিকেলের মধ্যেই সারা দেশ সহ সিলেটেও প্রতিটি গির্জায় বড়দিন পালনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটি উদযাপন করে থাকেন। আজ থেকে দুই সহস্রাধিক বছর আগে এই শুভদিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট। তাকেই আমরা ইসলামের শিক্ষা অনুসারে হজরত ঈসা আ: বলে অভিহিত করি। বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির কোলে জন্ম হয়েছিল যিশুর।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। বড়দিন উপলে দেশের সব চার্চ ও তারকা হোটেলকে ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন বাতি, বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই সাথে খ্রিষ্টান পরিবারের বাসাবাড়ি একইভাবে সাজানো হয়েছে। হোটেল ও পরিবারগুলোতে নানা ধরনের পিঠা ও বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের অনেকের ঘরেই বসানো হয়েছে প্রতীকী গোশালা। বেথেলহেমের গরিব কাঠুরের গোয়ালঘরেই যিশুখ্রিষ্টের জন্ম। সেই ঘটনা স্মরণ করে বাড়িতে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতেই এটি করেন যিশুর অনুসারীরা।
বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো, আবদুল হামিদ সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ উপলক্ষে আজ এক বাণীতে এ আহ্বান জানান।
আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর শুভ ‘বড়দিন’। এ উপলক্ষে দেশের খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা সারাবিশ্বে মহামতি যীশুখ্রিষ্টের শুভ জন্মদিনকে যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের সাথে ‘বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
তিনি বলেন, খ্রিষ্ট ধর্মানুসারে যীশুখ্রিষ্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত এবং আলোর দিশারি। ¯্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে তিনি বহু ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও শান্তির বাণী প্রচার করেন। পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আসার আহ্বান জানান। মানুষের মধ্যে ভালবাসা, সেবা, ক্ষমা, মমত্ববোধ, সহানুভূতি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের শিক্ষা দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাগতিক সুখের পরিবর্তে যীশুখ্রিষ্ট ত্যাগ, সংযম ও দানের মাধ্যমে পারমার্থিক সুখ অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনসহ অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যীশুখ্রিষ্টের শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণীয়।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এ কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, আবহমানকাল থেকে এদেশে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে।
তিনি বলেন,‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমি একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানাই।
রাষ্ট্রপতি কামনা করেন, ‘শুভ বড়দিন’ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীসহ সকলের জন্য বয়ে আনুক অশেষ আনন্দ ও কল্যাণ, সবার জীবন ভরে উঠুক সুখ ও সমৃদ্ধিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বানীতে বলেছেন, সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। সকল শ্রেণি-পেশা, সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ‘বড়দিন ' উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।
‘বড়দিন’ উপলক্ষ্যে তিনি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। সকল শ্রেণি-পেশা, সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিষ্ট বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল যিশু খ্রিষ্টের অন্যতম ব্রত। মহামতি যিশু বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাঁর জীবনাচারণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য মানব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক এবং শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে তিনি বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীসহ সকল নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
বড়দিন উপলক্ষে আজ রবিবার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন,জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।দৈনিক পুণ্যভূমি বিশেষ উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।দিনটি সরকারি ছুটির দিন।