পুণ্যভূমি ডেস্ক
মার্চ / ২৮ / ২০২৩
মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে রোববার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু’র স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। রোববার প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রোববার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে এবং বিউগলে করণ সুর বেজে উঠে। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও খাইরুজ্জমান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুল-উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহা উদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক খুলে দেওয়ার সাথে সাথে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। এসময় জাতীয় পার্টি, বিএনপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল বেদীতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অজিত কুমার সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলসমূহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসমুহ, জাতীয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হলসমূহ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা আওয়ামী লীগ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাপ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের প্রতি।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সুসজ্জিত করা হয় জাতীয় পতাকায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনেও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সড়কে অলঙ্করণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে উৎসবমুখর পরিবেশে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করে।
এ ছাড়া সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মোহাম্মদপুরে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও রাত ১২ টা ১ মিনিট (২৫ মার্চ দিবাগত) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করে।
এদিকে রোববার মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপির নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক এবং আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক বলেছেন, স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সেই সব অবদান নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।
জেলা পরিষদ সিলেট আয়োজিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।।
২৬ শে মার্চ দুপুরে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট মহানগর ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মন, সিলেট সদর উপজেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইর্শাদ আলী। সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স›দ্বীপ কুমার সিংহ-এর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান (১) মতিউর রহমান মতি, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান (২) মস্তাক আহমদ পলাশ, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান (২) আমাতুজ জাহুরা রওশন জেবিন, জেলা পরিষদের সদস্য সুষমা সুলতানা রুহি, সদস্য মোছাদ্দিক আহমদ, সদস্য নাসির উদ্দিন, সদস্য মোঃ আব্দুল হামিদ, সদস্য ইফজাল আহমদ চৌধুরী প্রমূখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কালেক্টরেট জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ মাওলানা শাহ আলম, গীতা পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিবেকানন্দ সমাজপতি। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিলেট জেলা পরিষদের সিএ এ কে এম কামারুজ্জামান মাসুম। পরে ২৫শে শে মার্চ কালো রাত্রিতে সারা দেশে নিহতদের স্মরণে ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত করেন হাফিজ মাওলানা শাহ আলম।
সভাপতি বক্তব্যে সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির গর্ব। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আজকের এই স্বাধীনতা লাল সবুজের পতাকা, এজন্যে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে আমরা গর্ব বোধ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্ব এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। জঙ্গীদের দমনে শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারনে দেশ এখন জঙ্গীমুক্ত হয়েছে।
তিনি সিলেটের উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম পেয়েছি, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ রেনে উন্নীত হচ্ছে। আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাহলে ২০৪১ এর আগে আমরা আমাদের লক্ষ্য উন্নতবিশে^ পদার্পন করতে পারব। সিলেট জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে রমজানের পরেই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।