রুহুল ইসলাম মিঠু
নভেম্বর / ১৪ / ২০২২
সিলেট নগরের ফুটপাত সহ সড়কের অধিকাংশ পথ জুড়ে সন্ধ্যা হলে হকারদের দখলে চলে যায়। কিছু দিন আগে এসএমপি পুলিশ হকারদের ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই হকাররা পুনরায় ফুটপাত দখলে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর আগে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরীর ফুটপাত দখলে থাকা হকারদের উচ্ছেদ করে লালদিঘির পারের খালি জায়গায় টিনসেটের দোকান নির্মাণ করে সেখানে হকারদের ব্যবসা করার সুযোগ দেন। তাতে নিরাশ হয়ে যায় ফুটপাতের এক শ্রেণির চাঁদাবাজ লাইনম্যানরা। লাইনম্যান নুরুল, রকিব আলী, আহাদ, লেংড়া কামাল, ফকির মিয়া সংঘবদ্ধ হয়ে লালদিঘিরপাড়ে ব্যবসায় পুনর্বাসিত হওয়া হকারদের লোভনীয় অফার দিয়ে ফুসলিয়ে পুনরায় হকারদের ফুটপাতে এনে বসার সুযোগ করে দেয়। এতে লাইনম্যানরা ফুটপাতে বসা হকারদের প্রতিজনের কাছ থেকে চাঁদা উঠিয়ে নেয়। ফুটপাতে হকারদের বসার সুযোগের মূল ভ‚মিকা পালন করে নুরুল, রকিব আলী, আহাদ, রুমন, সুমন, লেংড়া কামাল, ফকির মিয়া। মধুবন মার্কেটের পশ্চিম কর্ণার হতে সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ গেইট পর্যন্ত ল্যাইনম্যান ল্যাংড়া কামাল নিয়ন্ত্রণ করে। সেখান থেকে জিন্দাবাজার পয়েন্ট পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের লিটন মিয়া ফুটপাতে হকারদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রতিজন থেকে একশত টাকা চাঁদা ওঠায়। প্রতিদিন গড়ে প্রতি লাইন থেকে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা অবৈধ চাঁদা তুলে লাইনম্যানরা।
মধুবন মার্কেটের পূর্ব কর্ণার থেকে লালকুঠি সিনেমা হল গেইট পর্যন্ত ফুটপাত হকারদের নিয়ন্ত্রণে রাখে লাইনম্যান সাব্বির, টুকের বাজারের নুরুল। রাজা জিসি স্কুল রোডের হেড পোস্ট অফিসের পূর্ব গেইট পর্যন্ত ফুটপাত হকারদের নিয়ন্ত্রণে রাখে লাইনম্যান একরাম। তারা প্রতিদিন এখান থেকে হকারদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে। হাসান মার্কেটের ১নং গেইট থেকে মধুবন মার্কেটের পূর্ব কর্ণারের আগ পর্যন্ত লাইনম্যান উজ্জল প্রতিদিন একশত টাকা হারে দৈনিক ১৫ হাজার টাকা অবৈধ চাঁদা তুলে। সিলেট কালেক্টরেট মসজিদ মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের নিচ তলার সিঁড়ি জুড়ে ফুটপাতের লাইনম্যান ল্যাংড়া কামালের ভাই ফকির মিয়া অবৈধভাবে সরকারি লাইট জ্বালিয়ে গেঞ্জি প্যান্ট কাপড়ের দোকানদারী করছে। যদিও ক’মাস আগে ফকির মিয়াকে এ অবস্থা দেখে সিসিকের ভ্রাম্যমান আদালত তাকে জরিমানা করে। সেখানের সিঁড়িতে হকারী না করার জন্য নিষেধ করা হয়েছিল। হকার ফকির মিয়া সেখানে দোকানদারী করে যাচ্ছে। সবুজ বিপণী মার্কেটের সামনের ফুটপাতে হকারদের ব্যবসা তাড়িয়ে দিয়ে ফকির মিয়া নিজেই ফুটপাতের রাস্তা ও আইসিবি ব্যাংকের সিঁড়ি জুড়ে অবৈধভাবে হকারী করে যাচ্ছে। হকারদের প্রতিদিন ফুটপাতে সংঘবদ্ধ করে কালিঘাটের শরীফ ও চালিবন্দরের মিজানের নিয়ন্ত্রণে ফুটপাত হকারদের টাচ মোবাইলে চলে তীর জুয়ার আসর। দিনে ২ কোটি টাকার তীর জুয়ার আসর বসে ফুটপাত হকারদের জড়িয়ে। প্রতি হকাজনে ৮শত টাকার তীর জুয়ার দানে ৮০ হাজার টাকা লোভনীয় অফার থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, তারা ফুটপাতে হকার গিরির নামে এর আড়ালে তীর জুয়ার খেলায় মেতে উঠেছে। বন্দরবাজার ফুটওভার ব্রিজের পূর্বপাশের সিঁড়ির নিচে সিঙ্গনাল কাপড়ের দোকানের পশ্চিমে বসে জাহাঙ্গীর নামক এক যুবক সে টাচ মোবাইলের মাধ্যমে প্রতিদিন হকারদের কাছে জনপ্রতি ৮শত ও এক হাজার টাকার বিনিময়ে শত শত তীর জুয়া খেলার নম্বর বিক্রি করে অবৈধ ব্যবসা করছে। জাহাঙ্গীর প্রতিদিন একই ধান্ধায় তীর জুয়ার আসর টাচ মোবাইলের মাধ্যমে করে থাকে।
কদমতলী বাসটার্মিনাল রোডের যমুনা মার্কেটের সামনে প্রতিদিন প্রকাশ্যে জুয়ার আসর পরিচালনা বসে সুরমা মার্কেটের জামাল চক্রের।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও এসএমপি পুলিশের এক শ্রেণির অসৎ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ফুটপাতে চাঁদা তুলার জন্য লাইনম্যান নিয়োগ দিয়ে থাকে। বিনিময়ে লাইনম্যানরা তাদেরকে চাঁদার একটি অংশ দেয়। এছাড়া বন্দরবাজার ফুটওভার ব্রিজের পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ অংশে ছিনতাইকারীর নিয়মিত আড্ডা জমে। সেখান থেকে তারা মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাইকারে থাকে। কিন্তু প্রাণের ভয়ে কোন ব্যবসায়ী বা পথচারী প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
রুমন, সুমন প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে সিটি কর্পোরেশনের গেইটের সম্মুখে দাঁড়িয়ে পোষাক বিক্রি করার আড়ালে তাদের দু’জনের দখলে তালতলা থেকে বন্দরবাজার রাস্তার ফুটপাতে বসা সব ধরনের মাছ ব্যবসায়ীদেরকে তারা বসিয়ে চাঁদা ওঠায়।
বিশ্বনাথ, ভৈরব, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, বি-বাড়িয়া থেকে আসা দুর্ধষ অপরাধীরা মিলে সংগঠিত হয়ে বন্দরবাজারে ছিনতাই কর্মকাÐ ঘটায়। গত ১০ দিন আগে ভৈরবের আরিফ নামক এক ছিনতাইকারী বিকাল ৩টার দিকে কালেক্টর মসজিদের সামন থেকে জুড়ি উপজেলার কামিল নামক এক ছেলের মোবাইল ফোন ছিনতাই করে হাত বদল করে তার সঙ্গী সাথীদের দিয়ে দেয়। ঘটনার সাথে সে হাতে নাতে ধরা খেলে গণপিটুনী খেয়ে অন্যের মোবাইল নাম্বার থেকে তার অপর ছিনতাইকারীর নাম্বারে ফোন দিয়ে বলে ভাই ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, তুই তাড়াতাড়ি মধুবনের যে কোন একটি দোকানে মোবাইল পৌছে দিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে জানান। এই সুবাদে কামিল তার ফোনটি পেয়ে যায়।